বয়স্ক ভাতা প্রদান কর্মসূচি
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে যারা ভূমিহীন, বিত্তহীন এবং বার্ধক্যের কারনে যারা দৈহিক পরিশ্রমে অক্ষম তারাই সবচেয়ে বেশি দারিদ্রের শিকার। বয়স্ক এবং কাজ করতে অক্ষম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকার বয়স্ক ভাতা প্রদান কর্মসূচী চালু করেছে। গ্রাম এলাকার বয়স্ক ভাতা কর্মসূচী বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বাস্তবায়ন কাঠামো
- বাংলাদেশের সকল উপজেলার গ্রামীণ এলাকার ইউনিয়নে প্রতিটি ওয়ার্ডের ১০ জন সবচেয়ে বয়স্ক ও দরিদ্র ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়।
- এই ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৫ জন মহিলা থাকেন।
- প্রতি মাসে ১৫০ টাকা করে বছরে ১৮০০ টাকা বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়।
প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ড
- বয়স
- সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
- তবে ৫৭ বছর বয়স্ক না হলে কেউ ভাতা প্রাপ্তির জন্য বিবেচিত হন না।
- প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয়
- কোন ব্যক্তির মাসিক আয় ৩০০০ টাকার বেশি হলে তিনি বয়স্ক ভাতা পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
- স্বাস্থ্যগত অবস্থা
- কর্মক্ষমতাহীন অথবা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পান।
- শারীরিকভাবে অসুস্থ, মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ, প্রতিবন্ধী ও আংশিক কর্মক্ষমতাহীন ব্যক্তিরা ক্রম অনুযায়ী অগ্রাধিকার পান।
- শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীগণও কর্মক্ষমতাহীন বলে গণ্য হন।
- আর্থসামাজিক অবস্থা
- মুক্তিযোদ্ধা: বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
- আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে: নিঃস্ব, উদ্বাস্ত্তু ও ভুমিহীন ব্যক্তিদের ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়।
- সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে: বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের ক্রম অনুযায়ী অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
- বিভিন্ন খাতে খরচ
- খাদ্য, স্বাস্থ্য/চিকিৎসা, বাসস্থান ও অন্যান্য খাতে একজন ব্যক্তি বার্ষিক আয় কি অনুপাতে খরচ করেন তা বিবেচনা করা হয়। খাদ্য বাবদ যার সমস্ত আয়ের অর্থ ব্যয় হয়ে যায় এবং স্বাস্থ্য/চিকিৎসা, বাসস্থান ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করার জন্য কোন অর্থ অবশিষ্ট থাকে না তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
- ভূমির মালিকানা
- ভূমিহীন প্রার্থীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। যে ব্যক্তির বসতবাড়ি ছাড়া জমির পরিমাণ ০.৫ একর অথবা তার চেয়ে কম তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হন।
বয়স্কভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা
- সরকারী কর্মচারী অথবা পরিবারের সদস্য পেনশনভোগী হলে।
- দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারী হলে।
- অন্য কোনভাবে নিয়মিত সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত হলে।
- কোন বেসরকারী সংস্থা অথবা সমাজকল্যাণ মূলক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক অনুদানপ্রাপ্ত হলে।
- শহর ও পৌর এলাকায় বসবাসকারী হলে।
- পেশাগত ক্ষেত্রে দিনমজুর, ঝি এর কাজ করলে এবং ভবঘুরে হলে।
প্রার্থী বাছাই পদ্ধতি
- ভাতা প্রদানের জন্য দরখাস্ত আহবান করে গণমাধ্যম, দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে এবং স্থানীয়ভাবে সর্বসাধারণকে জানানো হয়।
- যারা ভাতা গ্রহণ করতে চান তাদেরকে একটি নির্ধারিত ছকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করতে হয়।
- ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি এবং ইউনিয়নে ওয়ার্ড পর্যায়ে একটি কমিটি থাকে।
প্রার্থীর মৃত্যু হলে
- বয়সের ভিত্তিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩ জন পুরুষ এবং ৩ জন মহিলাকে অপেক্ষমান তালিকা হিসেবে প্রস্ত্তত রাখা হয়।
- কোন বয়স্ক ভাতা প্রাপকের মৃত্যু হলে তার স্থলে একই ওয়ার্ডের অপেক্ষমান তালিকা হতে বয়সের ভিত্তিতে নারী পুরুষ প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত ব্যক্তি তালিকাভুক্ত হওয়ার দিন থেকে ভাতা গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হন।
- ওয়ারিশ হিসেবে কাউকে ভাতা প্রদান করা হয় না।
ভাতা পরিশোধের পদ্ধতি
- বয়স্ক ভাতা দেওয়ার জন্য বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ সমান ২ কিস্তিতে সোনালী ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
- উপজেলা হেড কোয়ার্টারে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংক না থাকলে অন্য কোন তফসিলী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।
- যারা ভাতা পাবেন তাদের ছবিতে মেম্বার/প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা/উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ একটি পাশবই থাকে।
- উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস ও সমাজসেবা কর্মকর্তার অফিসে বয়স্ক ভাতা প্রাপকের নাম, ছবি ও নমুনা স্বাক্ষরসহ রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হয়।
- শারীরিকভাবে অক্ষম কিংবা পর্দানশীন হওয়ার কারণে ভাতা গ্রহণের জন্য কেউ সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলে তিনি তার পক্ষে একজনকে মনোনয়ন দেন। মনোনয়ন প্রাপ্ত ব্যক্তির ছবিতে মেম্বার/প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা/উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে। ভাতা গ্রহণের সময় মনোনীত ব্যক্তিকে ভাতা প্রাপ্ত ব্যক্তি জীবিত আছেন বলে এই মর্মে স্থানীয় প্রতিনিধি (ওয়ার্ড মেম্বার/ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ) এর সনদপত্র পেশ করতে হয়।
- বয়স্ক ভাতা প্রতি মাসে দেওয়া হয়। কেউ এককালীন টাকা উঠাতে চাইলে নির্ধারিত সময়ের শেষে ভাতা উত্তোলন করতে হয়।
- বয়স্ক ভাতা গ্রহীতা মৃত্যুবরণ করলে সে সংবাদটি সমাজসেবা কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট থেকে মৃত্যু সনদপত্র সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ ও কার্যালয়কে বিষয়টি জানান।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১:বয়স্ক ভাতা কারা পাবেন?
উত্তর: বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার ইউনিয়নে প্রতিটি ওয়ার্ডের ১০ জন সবচেয়ে বয়স্ক ও দরিদ্র ব্যক্তি বয়স্ক ভাতা পাবেন।
প্রশ্ন ২: কত জন মহিলাকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়?
উত্তর: প্রতি ওয়ার্ডে ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৫ জন মহিলা বয়স্ক ভাতা পান।
প্রশ্ন ৩: বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য বয়স কমপক্ষে কত হতে হবে?
উত্তর: বয়স কমপক্ষে ৫৭ বছর হতে হবে,তবে সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পান।
তথ্যসূত্র
ইউনিয়ন পরিষদ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল (২০০৩), এ কে শামসুল হক ও কাজী মোঃ আফছার হোসেন ছাকী (সম্পাদিত), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এনআইএলজি), ২৯ আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে যারা ভূমিহীন, বিত্তহীন এবং বার্ধক্যের কারণে যারা দৈহিক পরিশ্রমে অক্ষম তারাই সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের শিকার। বয়স্ক এবং কাজ করতে অক্ষম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকার বয়স্ক ভাতা প্রদান কর্মসূচি চালু করেছে। গ্রাম এলাকার বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।